RCB বনাম PBKS: ছয় রানে স্বপ্নপূরণ, প্রথমবারের মতো আইপিএল চ্যাম্পিয়ন RCB

 RCB vs PBKS: স্মৃতি হয়ে থাকবে ময়দান, শুরু হল রক্ষণাত্মক যুদ্ধ 


২০১৮ সালের পর অন্তহীন প্রত্যাশা পেরিয়ে অবশেষে ২০২৫ সালের আইপিএল সেরার তালিকায় প্রথমবারের মতো নাম উঠালো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB)–এর। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল পাঞ্জাব কিংস (PBKS)। জুনের ৩ তারিখে (২০২৫), আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচে মাত্র ছয় রান ব্যবধানে জয় দিলো RCB । চলুন দেখে নেওয়া যাক কীভাবে লড়াই গোলকধাঁধার মতো গড়ে উঠল এবং কোন পর্যায়ে ম্যাচের রপ্তানাটা RCB–এর দখলে চলে এল।

111

ম্যাচের মূল পরিসংখ্যান :

স্থান: নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম, আহমেদাবাদ

তারিখ: ৩ জুন, ২০২৫

ফলাফল: RCB ১৯০/৯ (২০ ওভার) – PBKS ১৮৪/৭ (২০ ওভার)

জয় ব্যবধান: RCB ছয় রানে জয়ী 

ইনিংস সংক্ষিপ্ত বিবরণ :


1. RCB ব্যাটিং প্রথমে

নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে সংগ্রহ: ১৯০/৯

দলের সর্বোচ্চ ব্যাটসম্যান:

ফিল সল্ট: ৪০ (২৭) (৬ ছয়, ১ চার)

ভিরাট কোহলি: ৬৫ (৪০) (৩ ছয়, ৫ চার)


PBKS বোলিংয়ের মধ্যে সেরা:

আর্শদীপ সিংহ: ৩ ওভারে ২৭ রান, ১ উইকেট

জেমিসন: ৪ ওভারে ৪৩ রান, ১ উইকেট 


222

PBKS ব্যাটিং শুরু : 

নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে সংগ্রহ: ১৮৪/৭

দলের সর্বোচ্চ ব্যাটসম্যান:

প্রিয়াংশ আর্য (প্রিয়াংশ আরিয়া): ২৪ (১৯) (৪ চার)

জোশ ইংলিস: ৩৭ (২৫) (২ ছয়, ৩ চার)


RCB বোলিংয়ের মধ্যে সেরা:

কুনাল পাণ্ড্য: ৪ ওভারে ৩০ রান, ২ উইকেট (১২ ডট বল)

সুশায় শর্মা: ৪ ওভারে ৩৭ রান, ১ উইকেট 


 ভিরাট–RCB দলে আত্মবিশ্বাস


এই ফাইনাল ম্যাচে ভিরাট কোহলি ছিলেন RCB–এর প্রাণভোমরা। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম থেকেই আগ্রাসী শুরু। ওপেনার ফিল সল্ট সঙ্গে ঝলমলে জুটিতে ফ্লাইট দিবালোকের মতো আলো ছড়ালেন। কোহলি তাঁর চির পরিচিত ব্যাটিং তোপ অব্যাহত রাখলেন, ৪০ বলের মধ্যে ৬৫ রান তোলার মধ্য দিয়ে দলের পঞ্চাশ পেরিয়ে দিলেন। যদিও পরে ক্রমশ উইকেট হারিয়ে দিলেও অষ্টম উইকেটে মহম্মদ সিরাজ–এর সহযোগিতায় RCB ১৯০ রানের বিশাল লক্ষ্য দাঁড় করাল ।

নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ‘“ই সালা কাপ নামডে!”’–এর স্লোগান প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল, যখন ফিল্ডারদের প্রত্যেক ম্যাচের মতো চাপ সামাল দিতে হয়েছিল ব্রিজের মতো দৃঢ় মানসিকতায়। শেষ পর্যায়ে কুনাল পাণ্ড্য, সুশায় শর্মা ও মুস্তাফিজুর রহমান–এর মতো বোলাররা অভিজ্ঞতার সঙ্গে PBKS–এর ব্যাটসম্যানদের পেগে ফরাস মতো ভেঙে দিলেন ঝাঁজালো ইনিংস ।



333

PBKS: প্রত্যাবর্তনের লড়াই :

জবাব দিতে নেমে PBKS শুরুতে দৃঢ় লড়াই করেছিল। ওপেনিং জুটিতে প্রিয়াংশ আর্য ও ইংলিস দলের পুরো দায় নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন। ৪ ওভারের শেষে ৩২/০–তে দাপট দেখছিলো তারা। তবে RCB–এর তরুণ স্পিনার সুশায় শর্মা এবং পরের ওভারে জোশ ইংলিস আর প্রিয়াংশ আর্য–কে একে একে বন্দী করে শিবিরের আশা ক্ষুব্ধ হলো ।

পরবর্তীতে প্রাবইস্মরণ সিং হাল ধরার চেষ্টা করলেও ক্রমাগত বোলিংয়ের তীব্রতায় আর গতি রাখতে পারেনি। জোশ ইংলিস কিছুটা সামলাতে পারলেও শেষ মুহূর্তে কুনাল পাণ্ড্য–র দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট দিয়ে পাঞ্জাবের চ্যালেঞ্জ ভেঙে পড়িল । শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার শেষে ১৮৪/৭ করে থামতে হয় PBKS–কে, যেখানে হার মাত্র ছয় রানে।


ম্যাচের আলাদা আলাদা মুহূর্ত :



1. ফিল সল্টের ঝলমলে ইনিংস: ৪০ বলে ৬ ছয়ে ৪০ রান করেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান ফিল সল্ট। তাঁর আগ্রাসন RCB–এর রানরেট ধরে রাখতে সহায়তা করে ।


2. ভিরাট কোহলির অগ্রণী ভূমিকা: ফাইনাল মানেই চাপ, তবুতেও কোহলি ৪০ বলের মধ্যে ৬৫ রান করে দেখিয়ে দিলেন কেন তিনি বিশ্ব সেরা ব্যাটসম্যান ।


3. কুনাল পাণ্ড্য–র নেতৃত্বে সাফল্য: ৪ ওভার বল করে ১২ ডট বল দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন কুনাল পাণ্ড্য। তাঁর বোলিং ছিল PBKS–এর ইনিংস ভাঙার মূল চালক ।


4. ফিল্ডিংয়ে উজ্জ্বল পারফরমেন্স: ম্যাচের শেষ দিকে ফিল সল্ট–এর পেছনে ঝাঁপিয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ন ক্যাচ PBKS–এর ইনিংস আরও বিপর্যস্ত করে দেয় ।



444

ইতিহাসের পাতায় সমাহার :

২০০৮ সালে আইপিএল চালু হওয়ার পর থেকে RCB–এর ‘কপ্পা ফাঁকা’ ছিল নিঃসঙ্গ প্রত্যাশায়। ফুটবল মাঠের মতো উত্তেজনার ভরাট এই ফাইনাল ম্যাচে সব দলে দাপট দেখাতে পারলেও শেষ পর্যন্ত PBKS কে ৬ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো IPL রানার-আপ হওয়া মহাপরিকল্পনা বদলে দিল RCB–কে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতে ।

RCB–এর কোচিং স্টাফ এবং খেলোয়াড়েরা উৎসবের মেজাজে আনন্দ উল্লাস করলেন, যখন কেরিয়ারের দীর্ঘ যাত্রাপথ শেষ হয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়নের মুহূর্তে তারা হাজির ছিল। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, এই জয় শুধু একটি ট্রফি নয়, বরং একটি দলগত ঐক্য, দীর্ঘদিনের দুঃশ্চিন্তা ও বিপর্যয়ের পর মনোবল শক্ত করার এক নিদর্শন।

PBKS যদিও পরাজিত হলো, তবে তাদের খেলোয়াড়দের লড়াই, বিপরীতে দলের প্রতিভার উল্লাস, অভিজ্ঞতার ধাপ জমিয়েও রাখল ভবিষ্যতের আলোকে। তারা পরাজিত হলো ৬ রানে, কিন্তু শিখল শক্তি, সহনশীলতা আর দলের সামগ্রিক শক্তিকে গুরুত্ব দেওয়ার মন্ত্র ।


ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা ও সমাপ্তি :


১৫ বছর ধরে অপেক্ষার পর RCB–এর এই ঐতিহাসিক জয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মন ছুঁয়ে গেল। এখন প্রশ্ন হলো: আগামী মরশুমে RCB কীভাবে এই লড়াকু মনোভাব অব্যাহত রাখবে? আর PBKS–কে কীভাবে পরাস্ত পরাজয়ের পরে আবার নতুন করে রূপান্তর ঘটাতে হবে?

এই ম্যাচ স্মৃতি হয়ে থাকবে দীর্ঘদিন, কারণ শুধুমাত্র একটি ফাইনাল ছাড়া এটি RCB–এর আত্মতুষ্টি নয়, বরং পুরো আইপিএল ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। আর PBKS–এর বিপরীতে যত যাত্রা তারা দর্শাল, তাতে ২০২৬–এর মরশুমে আরও উন্নতি অপেক্ষায় থাকবে সবার কাছে।

অন্তিবিবরণী: হত্যুহীন প্রতিযোগিতা, মনখোলা ব্যাটিং, আবেগঘন বোলিং এবং দুর্দান্ত ফিল্ডিং—সব মিলিয়ে এই ম্যাচ ছিল এক অনন্য উদাহরণ, কীভাবে মাত্র ছয় রান পার্থক্য একজন যোদ্ধাকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে ফেলে ।






555

‌" আরও ক্রিকেট বিশ্লেষণ এবং খেলার কাহিনি পেতে আমন্ত্রণ রইল!





















No comments

Powered by Blogger.